শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য ও কিছু সুপারিশ

বর্তমান সরকার দেশকে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ তথা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘ভিশন ২০২১ ঘোষনা করেছেন। শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক অভিভাবক, রাজনীতিক, আলেম- ওলাম ব্যবসায়ী নিয়োগকারী, পেশাজীবীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের মতামত, সুপারিশ ও পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রথম একিট পূর্ণাঙ্গ জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শিক্ষা আইন এর খসড়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি/জেসিসি পরীক্ষার প্রবর্তন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পরীক্ষা শেষ হবার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ ও অনলাইন/ মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে ফলাফল সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন ও ই-মেইল পত্র যোগাযোগের মাধ্যমে মূল্যবান সময়কে কাজে লাগিয়ে দ্রæত বেগে অফিসিয়াল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শিক্ষাখাতে সবচেয়ে দু: সাহসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ। যা বছরের গুরুতেই ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে পাঠ্যপ্্্্ুস্তক উৎসব দিবস পালন ও বিশ্বে বিরল। শুধু তাই নয় পাশাপাশি সকল পাঠ্যপুস্তক আকর্ষণীয় ও সহজে ব্যবহারের জন্য ‘ই-বুক’ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দেড় যুগেরও বেশি সময়ের পূর্বের কারিকুলামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংযোজন করা হয়েছে। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কর্ম ও জীবন ভিত্তিক শিক্ষা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিসহ আরো ও অনেক নতুন বিষয় সহ পাঠ্যপুস্তকে রচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। পাশাপাশি সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিষয়কভিত্তিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।পাঠদান আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে ২০,৫০০টি (বর্তমানে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে) শিক্ষা পরিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসমরুম স্থাপন করা হয়েছে। আইসিটি প্রকল্পের আওতায় ১৮,৫০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটম, স্পিকার, ইন্টারনেট মডেম ও প্রজেক্টর বিতরনী করা হয়েছে এবং ৩১৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ছাত্রীদের উপবৃত্তির পাশাপাশি ছাত্রদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে এবং বেড়েছে উপবৃত্তির টাকার পরিমান। অনলাইন এমপিও কার্যক্রম চালু করে সেবা দোড় গোড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। শিক্ষকদের আইসিটি সহ বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষন অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। ঝরে পড়া রোধের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি ও স্বচ্ছল অভিভাবকদের সহায়তায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিফিন সরবরাহের স্কুল ফিডিং কর্মসূচী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপবৃত্তি কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নের ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩% এ উন্নতি হয়েছে। যার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে জেন্ডার সমতায় ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত ডেভেলপয়েন্ট গোল (এমডিজি) অর্জিত হয়েছে । যা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি অভাবনীয় সাফল্য। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ও সৃজনশীল মেধা অন্বেষন প্রতিযোগীতা পূনরায় চালু হয়েছে। যুগোপযুগী শিক্ষা সেবা নিশ্চিত করতে ব্যানবেইন এর উদ্যোগে ইউআইট্রি ল্যাব ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দৃষ্টি নন্দন ভবন স্থাপিত হয়েছে। সারা দেশে ক্রমান্বয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমান সরকার শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি সহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও শিক্ষকদের প্রমোশনসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। তাছাড়াও নীরবে বেসরকারী স্কুলও কলেজে জাতীয় করনের মত যুগহান্তকারী গ্রহণসহ সরকারী স্কুলের শিক্ষকদের ২য় শ্রেণীর গ্রেজেটেড পদ মর্যাদা পদান এবং ২৬ হাজার বেসরকারী বেজিষ্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ, ৫,৫৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১,১৩০টি মাদ্রাসা ১৫০০ শত কলেজ, ৭০টি পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের জনবল রাজস্বাখাতে স্থানাস্তর সহ ইতেপূর্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। তবে প্রমোশন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়ন নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তত্ত¡াবধানে উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ওসৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা বাস্তবায়িতা হচ্ছে।
কিছু সুপারিশ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী শিশুদের কাধ থেকে বইয়ের বোঝা কমানোর লক্ষ্যে সকল ক্লাসের বইয়ের সংখ্যা কমানো। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর আলাদা করে পৃথক অধিদপ্তর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি যুগোপযোগী সহ প্রশ্ন পত্র ফাঁস রোধ কল্পে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ভাল ও দায়িত্বশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মূল্যায়নের মাধ্যমে পুরষ্কার করে উৎসহিত করার ব্যবস্থা করা। জন সংখ্যার আধিক্যের কথা বিবেচনা করে দুইটি প্রতিষ্ঠানের দুরত্ব ৪ কিলোমিটার কমিয়ে ১ কিলোমিটার করা। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা। সকল বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক কারিগরী শাখা অনুমোদন করা এবং মোট সিলেবাসের ৫০% কারিগরী শিক্ষা প্রবর্তন করা। এস.এস.সি নির্বাচনের পরিবর্তের সকল শ্রেণীর প্রথম রোলধারী অভিভাবককে ম্যানেজিং / গভানির্ংবডিতে সদস্য মনোনয়ন প্রদান এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করুন। এমসিটিউ পদ্ধতি বিলুপ্তি করন এবং ১০ নম্বরের মৌখিক ও ১০ নম্বরের সহ পাঠ্যক্রমিক নম্বর চালু করণ। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ইনকাম সরকারী ফান্ডে স্থানান্ত পূর্বক প্রতিষ্ঠান সমূহকে জাতীয় করন ও প্রধান শিক্ষককে বদলি করন। শিক্ষা প্রশাসক ক্যাডার সৃষ্টি করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদে ক্যাডার ভুক্ত করন। হাজারো সমস্যার মধ্যে উক্ত প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়িত হলে কিছুটা হলেও সরকারের চলমান শিক্ষা সংস্কার কার্যক্রম গতিময়তা পাবে। সর্বোপরি দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি মূলক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে যার যার অবস্থান থেকে সৎ ও নিরপেক্ষ সেবা মূলক পদক্ষেপ গ্রহন করে জাতিকে এগিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ স্লোগান তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রোল মডেল বাস্তবায়ন এং একটি সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

লেখক : শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষিত ২০১৬ সনে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতার ফেনী জেলা শ্রেষ্ঠ উপজেলা
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও সাবেক কলেজ শিক্ষক।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ