১লা ফেব্রুয়ারী- ২৪, ফেনীর কিংবদন্তি আইনজীবী, বাম রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড গিয়াস উদ্দিন নান্নুর ৭৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে বাদ মাগরিব ফেণীর মুক্তবাজারে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হয়।

এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা- আয়োজক সংগঠন প্রগতিশীল আইনজীবী পরিষদ ফেণীর আহ্বায়ক এড সমির চন্দ্র করের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব এড সামসুদ্দিন মজুমদার সাচ্চুর সঞ্চালনায় এড গিয়াস উদ্দিন নান্নুর বর্ণাঢ্য জীবন, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের উপর বক্তব্য রাখেন এড শহীদুল ইসলাম, এড মাহফুজুর রহমান, এড ওবায়দুল হক, ফেনী জেলা গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন বাবলু।

সভায় বক্তারা এড গিয়াসউদ্দিন নান্নুর সংগ্রামী জীবন বিশেষ করে ছাত্র জীবন সাম্রাজ্যবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে একটি শোষনহীন গণতান্ত্রিক সমাজ কায়েমের আন্দোলনকে স্মরণ করেন ও তার আদর্শ এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড নতুন প্রজন্মকে ধারণ ও লালন করার দাবী জানান।

 

এড গিয়াসউদ্দিন নান্নু তার জন্মদিনে এধরণের আয়োজনে তার সহকর্মীদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তিনি তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মের স্মৃতি চারন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে গর্ববোধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “আমাদের যৌবনে যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিয়েছিলাম তা আজও বাস্তবায়িত হয় নাই।

তিনি বলেন ইতিহাসের রায় হিসাবে সমাজ পরিবর্তন হবে। তিনি আশাবাদী এবং হতাশ নন। তিনি সমাজ পরিবর্তনের জন্য সহকর্মী সহ নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানান।

উক্ত কেক কাটা অনুষ্ঠানে ফেনীর বিভিন্ন পেশাজীবি উপস্থিত ছিলেন।

ফেনীর বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নুর  জীবন বৃত্তান্ত 

===========================

এডভোকেট গিয়াসউদ্দিন আহমেদ নান্নু ফেনী বারের একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি একজন রাজনীতিবিদও বটে। ছাত্র জীবনে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।আলোচিত সমালোচিত এ আইনজীবী ফেণী জেলা জর্জ কোর্টে অত্যন্ত দাপটের সাথে আইন পেশায় নিযুক্ত আছেন।

এড গিয়াস উদ্দিন নান্নু ফেনী সদর উপজেলার ফাজিল পুর গ্রামে১৯৪৯সালে ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মৃত আজিজ উল্লাহ, মাতা তাহেরা বেগম।তাঁর পিতা রেলওয়ে হেড ক্লার্ক ছিলেন। নান্নু সাহেবের ৪ বোন রয়েছে।

এড গিয়াস উদ্দিন নান্নু ফাজিল পুর জিন্নাহ হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ফেনী পাইলট হাইস্কুলে ৬ষ্ট-১০ম শ্রেণিতে পডেন এবং ১৯৬৩ সালে এসএসসি পাস করেছেন।

 

তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে আইএ এবং ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে বিএসসি পাশ করেন।

 

লেখাপড়া শেষে গিয়াস উদ্দিন নান্নু জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৭০ সালে বিএডিসিতে চাকুরী নেন। সেখানে তাঁর চাকরি দির্ঘায়িত হয় নাই।এক পর্যায়ে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন নক্সাল রাজনীতি করার নাম করে। কিন্তু তিনি অবশেষে পুনরায় চাকরি ফিরে পান ফেনীর রাজা খাজা সাহেব ও ততকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনসুর আলীর বিশেষ অনুরোধে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদানের জন্য।

 

নান্নু সাহেব১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করে ১৯৭৯সাল ফেনীকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হয়ে অদ্যাবদী উক্ত পেশায় অত্যন্ত সুনামের সাথ জড়িত আছেন। তিনি ১৯৮৫ সালে ফেনী বারের সেক্রেটারি ও ২০০১ সালে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯০-১৯৯৬সালে জিপির দায়িত্ব পালন করেছেন। ফেনী বারের স্বনামধন্য আইনজীবী এড আক্রামুজ্জমান ওনার সিনিয়র ছিলেন।

 

এড গিয়াস উদ্দিন নান্নু ছাত্র জীবনে প্রগতিশীল রাজনৈতির সাথে জড়িত হন। তিনি মাওলানা ওযায়েজ উদ্দিন ও কাজী জাফরের নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৬৭-১৯৬৮সালে ফেনী মহকুমা ছাত্র ইউনিয়ন এর সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

১৯৭০ সালে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন এর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে কাজী জাফরের নেতৃত্ব ইউপিপি গঠিত হলে তিনি কেন্দ্রীয কমিটির সদস্য মনোনীত হন।১৯৮৫ সালে ইউপিপি জাতীয় পাটির সাথে সংযুক্ত হলে তিনি জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয কমিটির মেম্বার নিযুক্ত হন। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হিসেবে ফেণীতে প্রায একযুগ সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। যুদ্ধের ডামাডোল বাজার সাথে সাথে তিনি ভারত চলে যান, তিনি বাম রাজনীতিবিদ ওবায়েদ বলীর নেতৃত্বাধীন শ্রীনগর ক্যাম্পে ট্রেনিং নেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন স্হানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ভাতাসহ সরকারের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।

 

এড গিয়াস উদ্দিন নান্নু ১৯৭৫ সালে ফেনীর ফুলগাজি থানার দরবার পুর গ্রামের লুৎফা রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ৩ কন্যা সন্তান আছে। ২মেযে আমেরিকায় থাকেন। তিনি সুখেই আছেন ভালো আছেন।

 

আলোচিত সমালোচিত এ আইনজীবী ফেণীতে দাপটের সাথে আইন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিচক্ষণতা, সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি আইন পেশায় নিযুক্ত আছেন । ভযভিতি উপেক্ষা করে তিনি ফেণীর মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ২নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার লেঃ কর্নেল (অবঃ) জাফর ইমাম বীর বিক্রম,সাবেক এমপি জয়নাল হাজারি,ভিপি জয়নাল, সাবেক মন্ত্রী কাজী জাফর সহ এ সমাজে প্রতিষ্টিত অনেকেই তার ছাত্র জীবনের বন্ধু ও রাজনৈতিক নেতা সহকর্মি ছিলেন। সে সুবাধে মেধাবী এ ছাত্র নেতা ফেনীর রাজনেতিক অঙ্গনে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন।

 

তিনি মন্ত্রী জাফর ইমাম , জয়নাল হাজারি, নুসরাত সহ অনেক আলোচিত মামলা পরিচালনা করে বেশ আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন।

 

এড গিয়াস উদ্দিন নান্নু নিয়মিত কোর্টে আসেন।জনগনকে আইনিসেবা দেন।বর্তমানে রাজনিতি সাথে জড়িত নাই। তিনি মজলুম জননেতা মরহুম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর একনিষ্ঠ ভক্ত।তিনি ভাসানী স্মৃতি সংসদ ফেনীর সভাপতি।

 

তাঁর রাজনৈতিক নেতা মহামতি স্ট্যালিন বাংলাদেশে হায়দার আকবর খান রনো।

 

স্পষ্টবাসি-সাহসী নিবেদিতপ্রান এই আইনজীবী সামাজিক পারিবারিক সকল যোগাযোগ রক্ষা করে এগিয়ে চলছেন। নিজে হজ্বব্রত পালন না করে নিজ বোনের ছেলে গোপালের সোহেলকে ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন এবং নিজ মালীকিয় দখলীয় ৭০ শতক ভূমি নিজ বোন মমতাজ বেগমকে দান করে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন।

 

ফাজিল পুর গ্রামে তাঁর শ্রদ্ধেয প্রপিতামহ মরহুম ওয়াজেদ ভূইয়ার ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাড়ির দরজার মসজিদে ৭ লক্ষ টাকা দান করে পাকা করে এবং সরকারি অনুদান নিয়ে দ্বিতল ভবন করছেন। তিনি ঐ মসজিদ রাষ্ট্রীয় ওযাকফ সম্পত্তির তালিকা ভূক্ত করে সরকার কর্তৃক ১ম মোতোয়ালি নিযুক্ত হয়েছেন।

আমি একজন তাঁর শুভাকাঙ্খী ও রাজনৈতিক লিডার হিসেবে তাঁর দির্ঘায়ু কামনা করছি।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ