২রা ডিসেম্বর- ২৩ইং, ফেনী ছাগলনাইয়া নিজস্ব প্রতিনিধি:

জিরাতিয়া প্রজারা এখনো তাদের স্বীকৃতি পায়নি। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত এবং দখল দেয়া ভূমির নথী পায় নাই। তাদের দখলীয় ভূমির রেকর্ড হয়নি। জিরাতিয়া প্রজারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ভারত – বাংলাদেশ নো ম্যান্স ল্যান্ড, বাগান বাড়ী, পূর্ব ছাগলনাইয়া

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায়, পূর্ব ছাগলনাইয়া বাগানবাড়ীর বাসিন্দা বৃদ্ধ ছেরাজ মিয়া জানান- তিনি ২০ বৎসর বয়সে ১৯৬২ সালে রিফুজি কলোনীতে এসেছেন। তিনি ভোটার হয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৬৩ বছর পরও তাদের নামে রেকর্ড হয় নাই। এখনো তাদের ভূমির স্বীকৃতি নাই। তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হইতে বঞ্চিত। তিনি সরকারের নিকট পাকিস্তান সরকারের দেয় ভূমির রেকর্ড  দাবী করেন। তার বাড়ী নোয়াখালী অশ্বদ্বিয়ায় নদী ভাঙ্গার কারণে তার পিতা তার পরিবারকে নিয়ে আগর তলার আপনছরা গ্রামে বসতি স্থাপন করেছেন।

বাগান বাড়ী বাসিন্দা বৃদ্ধ ছেরাজ মিয়া।

১৯৪৭ দেশ ভাগ হওয়ার পর তাদের পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়। তাদের ১০০ জনকে এবং মসজিদের জন্য ১ পরিবার হিসাব করে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ৫ শতক ভূমি সহ এবং একবান টিন দিয়ে পূর্ব ছাগলনাইয়ার সাবেক ৩২৪ ও ৩৪২ দাগে ২টি টিলায় পূনর্বাসন করেন। দুটো টিলায় ১০০ পরিবার এখনো বসবাস করছে। অনেকে পামে জায়গা নিয়ে আছে। বেশির ভাগ পরিবার ছোট ছোট ঝুপড়িতে বসবাস করছেন। ছেরাজ মিয়া আরো জানান- বাগান বাড়ীতে ৩ শতাধিক লোক বসবাস করছে।

বেশিরভাগই আর্থিক সংকটে ভূগছে। অনেকে রিক্সা, সিএনজি চালিয়ে ও বদলা দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি জানান জিরাতিয়ারা নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের ব্যবহারের জন্য সুপেয় পানির অনেক সংকট রয়েছে সরকার প্রদত্ত ২টি বিশুদ্ধ পানির কল থাকলে তার মধ্যে একটি পুরোপুরি অচল। বাগান বাড়ীর আরেক অধিবাসী মনির উদ্দিন মানিক জানান তার পিতা সিরাজ মিয়া আসামের কাছাড় জেলায় সীলচর গ্রাম থেকে এসেছেন। তার পিতা বর্তমানে নেই, কিন্তু তারা এখনো অত্ম মর্যাদা পায় নাই। নাগরিক অধিকার সমূহ হইতে বঞ্চিত। তিনি জিরাতিয়াদের পুনর্বাসন এবং সরকারী সুযোগ সুবিধা সমূহ প্রদানের দাবী করেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে পানির তীব্র সংকট। সরকারীভাবে দুটো টিউবওয়েল দিলেও এখন একটি অচল।

ভারতের বাসিন্দারা তাদের রোপিত ধান কাটছেন

দক্ষিণ যশপুর কলোনির জিরাতিয়া প্রজা আবদুল মজিদ জানান, তার দাদা মুতি মিয়ার বাড়ী ছিল বেগম গঞ্জের কালুয়া গ্রমে। তার দাদা ও তার পিতা দানা মিয়াকে নিয়া আসামের নোয়াগাও জেলায় যমুনার মোড়ের পাঠ জুনাই গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর তারা শরনার্থি হয়ে বাংলাদেশে আসেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব সরকার তাদের ৫ শতক ভুমি ও ১ বান টিন দিয়া দক্ষিণ যশপুর পাঠান। তিনি জানান তখন বন জঙ্গল কেটে বাঘসহ বন্য প্রাণীর সাথে যুদ্ধ করে তারা এখানে আছেন। এখনো তাদের নামে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের দেয় ভূমি রেকর্ড ও কোন কাগজ পত্র দেয়া হয় নাই। তারা দখল স্বত্বে বসবাস করছেন।

তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেও স্বীকৃতি পান নাই। তিনি জানান জিরাতিয়ারা সহসা একটা সভা করে তাদের অধিকার নিয়ে সরকারকে লিখিতভাবে জানাবেন।

 

এ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ হবে আগামীকাল দৈনিক প্রতিভার ইউটিউব চ্যানেলটিতে দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক প্রতিভার ইউটিউব চ্যানেল: দৈনিক প্রতিভা (The Daily Protibha) [এখানে ক্লিক করুন] এবং

ফেসবুক পেজ: দৈনিক প্রতিভা (এখানে ক্লিক করুন) 

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ