নির্বাচনী প্রচারে নেমে শেখ হাসিনা বললেন, গাড়ি পুড়িয়ে সরকার ফেলা যাবে না, হাত পুড়ে যাবে
সিলেটবাসীর কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এ নৌকায়ই মানবজাতিকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার নৌকা যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদরাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার হারানোর কিছু নেই, আমি সব হারিয়েছি। কেবল এক বোন ছাড়া আমার আর কেউ নেই। এই জনগণই আমার সব। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার নেপথ্য বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচন। আমাদের ক্ষমতায় আসতে দিল না। কেন দিল না? দিল না এই কারণে, বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। ওই আমেরিকা প্রস্তাব করল গ্যাস বিক্রি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। যে সে ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেজন্য তার পিঠে বাহবা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসাল। ফলাফল কি? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন। আমি বলেছিলাম, খালেদা জিয়া গ্যাস দিতে পারবে না। আসলেও পায়নি। দিতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। যে কূপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পায়নি সেই একই জায়গায় কূপ খনন করে আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না এবার আমরা তেলও পেয়েছি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয় জেনে-বুঝেই দেয়। এটা হলো বাস্তবতা। এটাই আল্লাহর কাজ। আল্লাহ জানেন ওদের কাছে দিলে সব নয়-ছয় করবে আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে লাগবে।’
শেখ হাসিনা চলমান আগুন সন্ত্রাসের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপি আজ কি করছে? আমরা যখন উন্নয়নের কাজ করছি তখন তাদের কাজ হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন দিয়ে মা-শিশু, মা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য কোলের মধ্যে ধরে রেখেছে সেই মা আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে বাচ্চাসহ। আজকে সেই আগুন দিয়ে রেল পোড়াচ্ছে, বাস পোড়াচ্ছে, গাড়ি পোড়াচ্ছে।’
২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৩ সাল। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। তখন ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছিল। সে নির্বাচন ঠেকানোর নামে এই বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। ৫৮২টি স্কুল ঘর পুড়িয়ে দেয়, ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। ৭০টি সরকারি অফিস ভাঙে। ৬টি ভূমি অফিস ভাঙে। ৩ হাজার ২৫২টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। যেখানে যাত্রীবাহী গাড়ি ছিল, মানুষ এর ভেতরে পুড়ে কয়লা হয়। যাকে আগুন দেয় হেলপার সেখানে কয়লা হয়ে থাকে। ২৯টি রেল গাড়ি, দুটি লঞ্চ পুড়িয়েছে, সেই ২০১৩ থেকে ’১৫ পর্যন্ত তাদের এই অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও, ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়ে যায়। ৫০০-এর মতো মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এখনো সে মানুষগুলো পোড়া ঘা নিয়ে কষ্ট করে জীবন যাপন করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপর দিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কি করেছে? ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা সরকারে এসেছি। ২০১৮ সাল। নির্বাচনে তারা আসল। কিন্তু তারা নির্বাচনে কি করল? ভোট চাইবে কী, লন্ডনে বসে নমিনেশন দেয় একটা, গুলশান অফিসে বসে আরেকটা, পল্টন অফিসে বসে আরেকটা। নমিনেশন বেচা, বাণিজ্য শুরু করে দিল। এই সিলেটেও বাণিজ্য করেছে আপনারা জানেন। এই বাণিজ্য করে তাদের নির্বাচন শেষ। দোষ কার? দোষ তো তাদের।’
বেলা দুইটায় জনসভা শুরুর কথা থাকলেও দুপুরের আগেই মাদরাসা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বেলা পৌনে ১টার দিকে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টা ৯ মিনিটে সভাস্থলে আসেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে সকাল সাড়ে ১১টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এরপর প্রটোকলবিহীন গাড়িতে তিনি প্রথমে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন। এরপর হযরত শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত করে সার্কিট হাউসে যান। এ সময় তার ছোটবোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।
সর্বশেষ গত বছরের ২১ জুন বন্যার্তদের দেখতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ সফর করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি সিলেট সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময়সভায়ও অংশ নেন। তবে ২০১৮ সালের পর আজই প্রধানমন্ত্রী সিলেটে কোনো জনসভায় ভাষণ দেবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ২৯ মে প্রথমবার সিলেট সফরে আসেন শেখ হাসিনা। সে সময়ও তিনি সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে ভাষণ দেন। এরপর ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবর সিলেট সফরকালে আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্য দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নিয়মিত বিরতিতে সিলেটে নানা কর্মসূচিতে যোগ দেন। প্রতিবার নির্বাচনের আগে সিলেটে এসে মাজার জিয়ারত করে জনসভার মাধ্যমে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন তিনি।